বাংলা পঞ্জিকা মতে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের আগামী মাসে সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বাকি আছে কেবল ১০ দিন। ২ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এ উৎসব ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের প্রতিমা শিল্পীরা।
নগরের সদরঘাট, দেওয়ানজী পুকুরপাড় এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরির কারখানা রয়েছে। সবখানেই এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। কারো সুনিপুণ শৈল্পিক ছোঁয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে দেবীর মুখমণ্ডল, কারো রংতুলিতে সাজছে মা দুর্গা।
শিল্পীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পূজামণ্ডপে ছোট আকারের প্রতিমায় অর্ডার বেশি। পূজা কমিটির বাজেট কম। অর্ডারের পরিমাণও কম।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সদরঘাটের লোকনাথ শিল্পালয়, নটরাজ শিল্পালয়, স্বর্গীয় দুলাল পাল প্রতিমালয় এবং দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের রূপশ্রী শিল্পালয় ঘুরে দেখা গেছে, কারখানার একপাশে সাজানো দেবী দুর্গা, অন্যপাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। প্রতিটি কারখানায় এবারের দুর্গোৎসবের ১৫ থেকে ৪০টি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজও প্রায় শেষ। ৩ অক্টোবর শুরু হবে ডেলিভারি।
লোকনাথ শিল্পালয়ের প্রধান শিল্পী অমল পাল সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এবার সব পূজা কমিটির বাজেট কম। ছোট আকারের প্রতিমার অর্ডার বেশি।’
পূজা নিয়ে অনেকে ‘শঙ্কিত’ উল্লেখ করে প্রতিমা গড়ার এ কারিগর বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার বেশিরভাগ মানুষ শঙ্কিত। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ৮টা অর্ডার ক্যান্সেল হয়েছে। অনেকে অগ্রিম টাকা ফেরত নিয়েছেন। এসব দেখে শেষ পর্যন্ত অনেক প্রতিমা রয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এমনটা হলে লোকসান পোহাতে হবে।’
সুজন পাল নামে আরেক শিল্পী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘প্রতিমা নির্মাণের অর্ডার নির্ভর করে মানুষের মনের ওপর। কারণ মানুষ যদি সানন্দে থাকে তাহলে পূজার আমেজ বাড়তি থাকে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অনেকে শঙ্কিত। যার প্রভাব পড়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। আগে অনেকে বড় প্রতিমা অর্ডার করতো, এখন আকার ছোট করে ফেলছে।’
পূজামণ্ডপ কমেছে
গেল বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম মহানগরে ৬ শতাংশ কমেছে মণ্ডপের সংখ্যা। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, নগরে এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা ২৭৪টি। আগের বছর ২০২৩ সালে ২৯৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় এবার পূজা হচ্ছে ২ হাজার ১৫২টি মণ্ডপে, আগের বছর ছিল ২ হাজার ১৯০টি।
মণ্ডপের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে দেশে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বেশামাল অবস্থায় আছে। অনিয়ন্ত্রিত আছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য। অনেকে গেল বছর পূজার আয়োজন করলেও এই বছর সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে দেশে রাজনৈতিক পটভূমিতে একটা ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সনাতনীদের মধ্যে বিশাল একটা অংশ ভুগছে অনিশ্চয়তায়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। পাশে আছে রাজনৈতিক দলগুলোও।’
প্রথম/আরডি