মো আবদুল করিম সোহাগ -ঢাকা :-

কোনো কোম্পানিতে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি থাকুক আর না থাকুক, প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতেই ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেব না। সেটা এস আলমের হোক কিংবা বেক্সিমকোর হোক। প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ। ব্যক্তি থাকুক আর না থাকুক, প্রতিষ্ঠান থাকবে, প্রতিষ্ঠান চলবে।’

এসব বড় শিল্প গ্রুপের সঙ্গে যে বহু মানুষের জীবিকা জড়িত, সে কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়েও সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের শ্রমিকদের জীবিকা আছে। আবার সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাংকের সম্পর্ক আছে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আলাদা। আমাদের প্রধান লক্ষ্য, আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে মরতে দেব না। ফান্ড ভাঙতে দেব না। সেই ফান্ডকে আরও গড়তে চেষ্টা করব। তাড়াহুড়া করে ইমোশনালি কোনো কিছু করা যাবে না। ইমোশন দিয়ে দেশ চললে সেটা কিন্তু ভালো হয় না।’

এ সময় তিনি জানান, ‘২০১৭ সালের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে ‘৮০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে’ এস আলম। এটা যে বিশাল ক্ষতি তা এক দিনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। নতুন বোর্ড দেওয়ায় তারা আবার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

তবে নতুন বোর্ড ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে’ কাজ করছে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, তারল্য ঘাটতিতে পড়া ইসলামী ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।

গত ৭ বছর আগেও দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ইসলামী ব্যাংক। তবে ওই ব্যাংককে জামায়াতে ইসলামীর কবলমুক্ত করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকে এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের একে একে চাকরিচ্যুত করে তৎকালীন সরকার। একই সঙ্গে সাবেক সরকারের শীর্ষ নেতাদের পরোক্ষ হস্তক্ষেপে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ‘জোরজবরদস্তি’ করে ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয়।এ ব্যাংকে আগে থেকেই কিছু শেয়ারের মালিকানা ছিল এই ব্যবসায়ী গ্রুপটির। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। তারপর নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয় গ্রুপটি। তাতে এক সময় আমানতের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ব্যাংকটির দ্রুত অবনতি ঘটে।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক পুনর্গঠনে হাত দিলে ইসলামী ব্যাংকেও ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন পর্ষদ গঠন করে দিলে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক।

গভর্নর বলেন, অযোগ্য ব্যক্তিদের আর প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না। যারা নিজের স্বার্থে কাজ করছে, তাদের রাখা যাবে না। কিন্তু যারা যোগ্য ব্যক্তি, নিঃস্বার্থভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবেন, কেন তারা থাকবেন না? যারা অভিজ্ঞ, তারা এসব প্রতিষ্ঠানে থাকতেই পারেন। ঢালাওভাবে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। ইসলামী ব্যাংকে কারা থাকবেন কিংবা কারা থাকবেন না, সে বিষয়গুলো বোর্ড থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বোর্ডে যাদের দেওয়া হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাত বিষয়ক অভিজ্ঞ কর্মী হিসাবেও কাজ করছে।

প্রথম / আরডি